২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


মাদরাসার সামনে ডাস্টবিন : স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

মাদরাসার সামনে ডাস্টবিন : স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা - ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগালিতে অবস্থিত টংগী দারুল উলুম মাদরাসার সামনে বিশাল বড় একটি ডাস্টবিন বানানো হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। কওমী মাদরাসাগুলোর শিকক্ষার্থীদের সাধারণত মাদরাসায় আবাসিক থেকে লেখা-পড়া করতে হয়। এই মাদরাসায়ও কয়েক শ’ শিক্ষার্থী আবাসিক পড়াশোনা করে। এই ময়লার স্তুপের কারণে তাদের জীবন বেশ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

অসহনীয় দুর্গন্ধে ক্লাস-খাওয়া-ঘুম সবই শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্জ্যের উৎকট দুর্গন্ধের কারণে চলাচলে সমস্যায় পড়ে পথচারীরা। আশপাশের বাসাবাড়ির মানুষও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এর কারণে।

টঙ্গী দারুল উলুম মাদরাসার মিশকাত জামাতে এক শিক্ষার্থী মীর তানযীল বলেন, ডাস্টবিন একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা। শহরের দালানকোঠায় বসবাসকারী মানুষের ঘরে নিত্যদিনই আবর্জনা জমে। সেগুলো থেকে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যম ডাস্টবিন। কিন্তু যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবস্থিত সেখানে এই নর্দমার উপস্থিতি কতটা যুক্তিযুক্ত, তা কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন।

মাদরাসার সন্নিকটে ডাস্টবিন থাকায় আমরা এতটুকু তো উপকৃত হচ্ছি যে, ময়লা যখন-তখন ফেলে আসতে পারছি। অতিরিক্ত খরচ থেকেও বাঁচছি। কিন্তু এর চেয়ে ক্ষতিটা অনেক বেশি। যেমন ধরুন—

ক. ক্লাসে বসে আছি। শিক্ষক ক্লাসে পড়াচ্ছেন। হঠাৎ জানালা দিয়ে আসা দুর্গন্ধ রুমজুড়ে ছড়িয়ে গেলো। এমতাবস্থায় ক্লাসের অবস্থা কী হয় বলুন! যেহেতু একটি বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হিফজ ও মক্তব ছাড়াও প্রাথমিক-মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক-স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমমান পর্যন্ত কতগুলো ক্লাস! এতগুলো ক্লাসই এই যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে।

খ. খাবার নিয়ে বসেছে ছেলেটা। সবকিছুই ঠিকঠাক। লোকমা তুলে মুখে পুরে নিতে যাবে, ঠিক তখনই নাক আক্রান্ত হলো ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে। এহেন পরিস্থিতিতে খাবার কি মুখে দেয়া যায়! একটি ছাত্রাবাস হিসেবে এখানে শিশুসহ সাত-আট শ’ শিক্ষার্থী খাবার খায়। সবাই এই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

গ. প্রচণ্ড গরম পড়েছে। আজকাল লোডশেডিং একটু বেশিই হচ্ছে। দক্ষিণা বাতাসে একটু ঠান্ডা হওয়ার আশায় ছেলেগুলো জানালার ধারে গিয়ে বসল কিন্তু মুহূর্তেই বাতাসে মিশে আসা দুর্গন্ধ তাড়িয়ে দিচ্ছে সবাইকে।

ঘ. বিশ্রামের সময়। পড়ালেখা করে তখন ক্লান্ত। বিছানায় গা এলিয়েছে ছেলেটা। ওদিকে কেউ ময়লায় নাড়া দিয়ে মারাত্মক দুর্গন্ধের গুলি ছুড়লো। এই আঘাত ঘুমন্ত ছেলেটিকেও ছাড় দিচ্ছে না।

ঙ. নামাজে দাঁড়িয়েছে মুসুল্লিগণ। সকল ব্যস্ততা রেখে রবের ডাকে সাড়া দিয়ে একনিষ্ঠ হয়েছেন এবাদতে। ছাত্র নয় শুধু, এলাকার সাধারণ জনতাও। এই নিরিবিলি পরিবেশে গোলমাল পাকাচ্ছে আবর্জনার দুর্গন্ধ। নষ্ট করছে একাগ্রতা। থুথু ফেলার সুযোগটুকু নেই!

এমন শত সমস্যার সমনে অসহায় ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয় মুসুল্লি। একটি বৃহত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি পবিত্র জামে মসজিদ ও একটি পৌর ঈদগাহ ময়দান। পাশেই বিশাল এক নর্দমা। সামনের দিকে দৃষ্টি ফেললে আবর্জনার স্তুপ, ময়লা তোলার মিনি ভেগো, ময়লার ট্রাকের সারি দৃষ্টিগোচর হয়। আর সকাল-বিকেল ময়লা বোঝাই ভ্যান তো আছেই!

আমি মনে করি, জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টা নিয়ে অনতিবিলম্বে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের আঙিনা অপরিচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত রাখা কর্তব্য। আমরা জনপ্রতিনিধির কাছে ডাস্টবিন স্থানান্তর করে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে দূরে সরিয়ে নেবার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement